
এক বছরে ৮৫ টি ডাকাতি সংগঠিত
কক্সবাজারের উপকুলীয় দ্বীপ মহেশখালী উপজেলার বিভিন্ন সড়কে সড়ক ডাকাতি আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পেলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন নিরব দর্শকের ভুমিকা পালন করছে। তারা দেখেও না দেখার ভান করে বসে বসে আছে। বিশেষ করে জেলার একমাত্র ক্রাইমজোন হিসেবে খ্যাত কালারমারছড়া-চালিয়াতলী,গোরকঘাটা শাপলাপুর সড়ক ও কালারমারছড়ার উত্তর নরবিলা চালিয়াতলী দরগাহ্ ঘোনা নামক স্থানসহ মাতারবাড়ী সংযোগ সড়কে প্রকাশ্যে দিন দুপুরের সড়ক ডাকাতি আশংকাজনক হারে বুদ্ধি পাওয়ায় উক্ত সড়কে যাতায়াত পথচারী ও এলাকাবাসী চরম উদ্ধেগ ও উৎকন্ঠায় দিন কাটাচ্ছে। সন্ধ্যা হওয়ার সাথে সাথেই উক্ত সড়কে প্রতিনিয়ত ডাকাতি হচ্ছে বলে জানান সড়কে যাতায়াতকারী পথচারীরা। এলাকার সচেতন মহলের অভিমত উক্ত সড়কে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সুষ্ট নজরদারী ও পুলিশি টহল জোরদার না থাকায় ডাকাতরা উক্ত যাতায়াতকারী বিভিন্ন যানবাহনকে রাস্তায় ব্যারিকেট দিয়ে যাত্রীসাধারণের কাছ থেকে র্সবস্ব লুটে আনোয়াশে ডাকাতি করে পাহাড়ে তাদের আস্তানায় চলে যায়। গত এক বছরে উক্ত সড়কে প্রায় ৮৫ টি ডাকাতি সংগঠিত হয়েছে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। আহত হয়েছে প্রায় ৫’শত যাত্রী সাধারণ। ডাকাতের কবলে পড়ে হাজার হাজার পথচারী তাদের সর্বস্ব হারিয়ে পথের ভিকারী হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে।
জানা যায়, সম্প্রতি ডাকাতের কবলে পড়া মাতার বাড়ী রাজঘাট এলাকার মাসুম,খলিল ও কলিমুল্লাহ জানান, ডাকাতরা সংখ্যায় নগন্য হলেও নানা কারনে তাদের সাথে পেরে উঠছেনা ঐ সড়কের যাতায়াত কারীরা । এমনকি স্থান গুলো দূগম পাহাড়ী এলাকা উপজেলার কালারমারছড়া-মাতারবাড়ী ইউনিয়নের সামীন্তবর্তী এলাকা হওয়াতে ইউনিয়নের রশি টানাটানির কারনে দীর্ঘ বছর ধরে দুভোর্গ পোহাচ্ছে উপজেলার হাজার হাজার লোকজন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মহেশখালী দ্বীপের স্থল পথের যাতায়তের প্রবেশদ্ধার কালারমারছড়া উত্তরনরবিলা-চালিয়াতলী গ্রাম। এছাড়া প্রশাসনিক জনসচেতনার অভাবে দুই ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়াতে অসহায় ভূক্ত ভোগীরা ঘনঘন ডাকাতির শিকারে আক্রান্ত হচ্ছে। নানা সূত্রে মতে, গেল জুলাই মাসে উল্লেখিত স্থানে ৩০ দিনে ১৮ টির মত ডাকাতির ঘটনা ঘটে দেশ বাসিকে ভাবিয়ে তুলেছে , এবং ডাকাতির আঘাতে আঘাত প্রাপ্ত হয়েছে শতাধিকের ও বেশি লোকজন।
সূত্র মতে, ২০১৪ সালের আগষ্ট থেকে চলতি মাস পর্যন্ত উল্লোখিত স্থানে একটি জরিপে দেখা গেছে ৮৫ টির মত ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। নগদ টাকাসহ লুট করে নিয়ে যাওয়ার সম্পদের আনুমানিক মূল্য প্রায় কোটি টাকারও বেশী হবে জানান এলাকাবাসি। ভূক্ত ভোগী এবং স্থানিয় মানুষেদের সাথে কথা বলে হলে তারা ডাকাত প্রবল এলাকায় স্থায়ী ভাবে যদি একটি পুলিশ বক্স স্থাপন করে হয় অথবা সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কালারমারছড়া ফাঁড়ি পুলিশ এবং মাতারবাড়ী ফাঁড়ি পুলিশের টহল জোরদার হলে থামবে ডাকাতি । অন্যদিকে কালারমারছড়া পুলিশ ক্যাম্প এবং মাতারবাড়ী পুলিশ ক্যাম্প থাকলে ও উক্ত সড়কে তাদের কোন ধরণের নজরদারী ও টহল না থাকায় ডাকাতরা আনোয়াশে ডাকাতি করছে বলে অভিযোগ তোলেন এসড়কে চলাচলকারী লোকজন। স্থানিয় ইউ.পি সদস্য নুরুনবী জানিয়েছেন, পুলিশের স্থায়ি ভাবে চৌকি বসানো না হলে ডাকাতি থামানো যাবে না। মহেশখালী উপজেলা ছাত্রলীগের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক পরোয়ার (হাবিব বকুল) সাংবাদিকদের বলেন, এলাকার বেশ কিছু প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় উঠতি প্রজন্মের কিছু যুবক ডাকাতির মত জঘন্যতম ঘটনা ঘটাচ্ছে। এ ডাকাতি সম্মলিতভাবে বন্ধ করা প্রয়োজন। জানা গেছে, উত্তর নলবিলা এলাকার ডাকাত সর্দার বজল জনগণের গণ-ধোলাই নিহত হয়। বজল মারা যাওয়ার পর এ বাহিনীর দেখ ভাল করেন শেখ মুজিব ডাকাত। শেখ মুজিব সম্প্রতি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে গেল কিছুদিন ডাকাতি বন্ধ ছিল। ফের কালারমারছড়া ইউনিয়নের চালিয়াতলী-মাতারবাড়ী সড়কে ইউনিয়নের উত্তরনলবিলা এলাকার ২০০২ সালের রশিদ হত্যা মামলার ওয়ারেন্টভূক্ত আসামী একই এলাকার মৃত মোঃ আলীর পুত্র লিয়াকত আলীর এর সহযোগিতায় কালারমারছড়া ইউনিয়নের চালিয়াতলী-মাতারবাড়ী সংযোগ সড়কে ইউনিয়নের উত্তরনলবিলা এলাকার একরাম ডাকাতের নেতৃত্বে সাহাব উদ্দিন, গিয়াস উদ্দিন, সালাহ উদ্দিন, নেজাম উদ্দিন, রিদুয়ানসহ ১৫/২০ জনের সশস্ত্র ডাকাতদল যাত্রীবাহী ৪/৫টি সিএনজি গাড়ীতে হানা দিয়ে ডাকাতি সংগঠিত করেছে। সর্বশেষ গত রবিবার ও সোমবার রাত ১১ দিকে একই কায়দায় এ ডাকাতি সংগঠিত করে। উপকূলীয় মানুষের কাছে মূর্তিমান আতংক হিসেবে বিবেচিত এই বাহিনীর সদস্যরা। এই বাহিনীর প্রত্যেক সদস্য হত্যা,ডাকাতি, ধর্ষন, সহ অসংখ্য মামলার আসামী হয়। পার্শ্ববতী মাতারবাড়ী, ধলঘাটা, শাপলাপুর ইউনিয়নের চলাচলকারী যানবাহনগুলোকে প্রায় প্রতিদিন এই বাহিনীর হাতে ডাকাতির শিকার হতে হয় । সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা যায়, কালারমারছড়া এসব বাহিনীর হাতে দেশীয় অস্ত্র ছাড়া ও দেশের সর্বাধুনিক হালকা ও ভারী স্বয়ংক্রিয় আগ্নে অস্ত্র রয়েছে বলে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও র্যাব নিশ্চিত হয়েছে। পুলিশ-র্যাবের কাছ থেকে দাগী আসামী ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘঠেছে উক্ত এলাকায়। তাছাড়া র্যাব-পুলিশÑসন্ত্রাসীদের বন্দুক যুদ্ধের সময় প্রকাশ্যে ব্যবহার হয়েছে আধুনিক ভারী অস্ত্র। এসব অস্ত্র উদ্বারের প্রয়োজন মনে করছেন এলাকার সচেতন মহল ও স্থানীয় জনসাধারণ।
এ ব্যাপারে মুঠো ফোনে জানতে চাওয়া হলে মহেশখালী থানার ওসি সাইফুল আহমেদ বলেন, ডাকাত শেখ মুজিব গ্রেফতার হওয়ার পর উক্ত সড়কে ডাকাতি আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে, তবে অক্ষত থাকা ডাকাতদের গ্রেফতার করতে পুলিশ অভিযান চালাবে। তবে তিনি ডাকাতদের গ্রেফতার করতে এলাকাবাসীসহ সকলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন।
পাঠকের মতামত